
মুখে দাগ, বিশেষ করে ভ্রুতে কাটাদাগ থাকলে সবার আগে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কারণ অনেকসময়ই সেখানে কোন চুল থাকে না। ভ্রু-র দাগ কে ঢেকে রাখা বা দূর করা কী সম্ভব? কখনো কখনো এধরনের দাগ দূর করার একমাত্র উপায় হল লেসার বা অস্ত্রোপচার। তবে কিছু প্রাকৃতিক উপায় আছে যার সাহায্যে দাগকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা যায়। দাগ দূর করার কিছু বিশেষ মেকআপ কৌশল শিখে নিন।
ভ্রু-তে দাগ কী করে হয় আর কীভাবে হয়?
দাগ বা স্কার কারণ হল ত্বক যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন সেখানকার ট্যিসুতে বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায়। কখনো কখনো আঘাত, দুর্ঘটনা, জখম বা পুড়ে যাওয়ার ফলে হয় এবং কখনো কখনো বিভিন্ন রকম অস্ত্রোপচার বা প্রসাধনী প্রক্রিয়ার জন্য এরকম হয়। স্বাস্থ্যকর ফাইব্রাস সংযোজক টিস্যু দিয়ে একে প্রতিস্থাপিত হয়, যা স্কার টিস্যু হিসাবে বেশি পরিচিত।
আপনার জানা উচিৎ যে তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে দাগের রকমফের হয়ঃ কিছু দাগ অনেক সময় আবছা হয়ে যেতে থাকে এবং কিছু সময় পর তা আর দেখা যায় না অথবা খুব গভীর এবং অনেক বড় জায়গা জুড়ে থাকে – এরকম দাগ ত্বকের ওপরে থেকে যায় বছরের পর বছর এবং হয়তো সারাজীবন। শরীরের দাগ খুব সহজেই পোষাক দিয়ে ঢেকে ফেলা যায় এবং আমরা এনিয়ে সাধারণত চিন্তাও করি না কিন্তু এই দাগ যদি মুখে হয় তাহলে অন্য কথা, এগুলি খুব অস্বস্তিদায়ক, তাই জন্য অনেকে এই ধরণের দাগ দূর করার উপায় খোঁজেন বা মুখে, ভ্রুতে বা সহজে দেখা যায় এরকম জায়গার দাগ অন্তত ঢেকে ফেলতে চান।
দাগকে সারিয়ে তোলার প্রসাধনী
যদি আপনার ভ্রু-র দাগ খুব গভীর না হয়, তবে বিশেষ ক্রীম বা মলম দিয়ে আপনি সেটিকে অগভীর করে ফেলতে পারবেন বা এমনকি দূর করে দিতেও পারবেন। এগুলো ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়, তবে কিছু জিনিস ডাক্তাররা প্রেসক্রাইব করেন। এগুলির মধ্যে এমন সব উপাদান রয়েছে যা ত্বককে নতুন করে গড়ে তুলতে ও সেই সঙ্গে নতুন কোষ তৈরী করতে সাহায্য করে, ফলে দাগের কোন চিহ্ন থাকে না।
এই পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত কিছু উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজের খোসা থেকে পাওয়া ইথানলের নির্যাস, সোডিয়াম হেপারিন, মুক্তার গুঁড়া, স্টেম সেল সেন্টেলা এশিয়াটিকা সহ, পলিসিলোক্সেনস, সাইক্লোপেন্টাসিলক্সেন, গোল্ড ন্যানোকোলয়েড এবং সিলিকন ডাইঅক্সাইড। যদি আপনি ভাল একটা দাগ দূর করার পণ্য খোঁজেন তাহলে সেগুলিতে ওপরের লিস্টে বলা এই উপাদানগুলির বেশীর ভাগ উপাদান আছে কিনা তা দেখে নিন।
দাগ বা স্কার মেকআপ কভাররেজ
ভ্রু-র দাগকে ঢেকে দিতে মেকআপ করা এমন কিছু জটিল ব্যাপার নয়! দেখে নিন এর প্রত্যেকটি পর্যায় – আপনি খুব তাড়াতাড়ি ভ্রু-র দাগ বা ফাঁকা জায়গা ভরাট করার মেকআপ কৌশলের মাস্টার হয়ে যেতে পারবেন!
কনসিলার – এই প্রসাধনীটি দাগকে ভালো ভাবে ঢেকে দিতে পারে, বিশেষত যখন সেটি সদ্য ও লাল থাকে। স্কিন টোনকে সমান করতে এটি একটি আবশ্যক পণ্য। মনে রাখবেন লাল দাগকে ঢেকে ফেলার জন্য সবুজ কনসিলার সবচেয়ে ভালো কাজ করে, এবং বেগুনি রঙের দাগের ক্ষেত্রে হলুদ কনসিলার। পুরোন, মুক্তোর মত সাদা দাগে ন্যুড শেডগুলি ভালো কাজ করে।
মেকআপের সাহায্যে ভ্রু-র দাগকে কী করে ঢেকে ফেলা যায়। নির্দেশিকার প্রতিটি ধাপ
১। ত্বককে নমনীয় ও ময়েশ্চারাইজ করে তুলতে মুখে ময়েশ্চারাইজার বা লোশন লাগান যাতে পরের ধাপগুলি করতে সুবিধা হয়। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মেকআপ সমানভাবে ত্বকে মিশে যাবে এবং একটা স্বাভাবিক লুক দেবে।
২। আপনার প্রিয় কনসিলার লাগান। একটি চ্যাপ্টা কিছুটা বাঁকানো ব্রাশ এটি লাগানোর জন্য খুব উপযোগী হবে। নিখুঁতভাবে পণ্যটি লাগানোর জন্য এর ব্রিসলগুলিকে নরম হতে হবে। এরপর কনসিলারকে সুন্দর করে ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে দিন।
৩। ফাউন্ডেশনের একটা হালকা পরত লাগানঃ আপনি এর জন্য ফাউন্ডেশন ব্রাশ বা স্পঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। আপনার স্বাভাবিক স্কিন টোনের সঙ্গে ফাউন্ডেশনের শেড মিলে যেতে হবে। নয়তো, আপনার পুরো মুখের থেকে ভ্রুর এলাকা আলাদা লাগবে।
৪। ঢাকা জায়গাকে অনেকক্ষণ ধরে একই রকম রাখতে স্বচ্ছ পাউডার দিয়ে হালকা করে ভ্রু ব্রাশ করে নিন।
৫। এবার শুরু করা যাক ভ্রু মেকআপ! যদি আপনার দাগের জায়গাটি অনেক বড় হয় এবং সহজেই চোখে পড়ে, তাহলে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে পোমেড ব্যবহার করা। এই প্রসাধনীটি অনেকটা জায়গা জুড়ে ভরাট করার ক্ষমতা রয়েছে এবং এর পেস্টের মত ঘনত্ব ফাঁকা জায়গাকে সঠিক ভাবে ঢেকে দিতে পারে। পোমেড নরম, অনেকক্ষণ ধরে থাকে এবং জলনিরোধক এবং ফাঁকা জায়গায় সত্যিকারের ভ্রুর চুলের মত দেখতে চুলের এফেক্ট দেওয়া যায়। এই প্রসাধনীটি দিয়ে নতুন করে আপনার ভ্রু-যুগলকে সুনির্দিষ্ট করে ফেলা যায়। এর সম্পর্কে আরো পড়ুন [আমাদের ব্লগে কীভাবে ব্রো পোমেড ব্যবহার করতে হয়]।
৬। স্পুলি দিয়ে, বাড়তি প্রসাধনীর অংশ সাবধানে ঝেড়ে ফেলুন। শেষের দিকটিকে বেশি জোরালো করতে হবে অন্যদিকে ভেতরের ধারটিতে স্বাভাবিক দেখানোর এফেক্ট দিতে সুন্দর করে মিশিয়ে দিতে হবে।
নিজে করো – দাগের জন্য ঘরোয়া উপায়
ঘরোয়া উপায়গুলি দিয়ে কী সত্যিই দাগ দূর করা যায়? অবশ্যই, ক্রীম ও নিজে বানানো প্রসাধনী যাতে ছোট ও অগভীর দাগে ত্বককে সারিয়ে তোলার উপকরণ রয়েছে তা দিয়ে অবশ্যই করা যাবে। প্রাকৃতিক তেল ও মধু মিশিয়ে লাগানো, ত্বককে নতুন করে উজ্জীবিত করার অন্যতম জনপ্রিয় উপায়। আপনি এটা নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেনঃ শুধু ৩-৪ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল, ৫০ মিলি কোকোনাট অয়েল বা নারকোল তেল এবং ৫০ মিলি আরগন অয়েলের সাথে ১০ মিলি (১ টেবিল চামচ) মধু মেশান।
নারকোল তেল পুষ্টিকর এবং এই তেলে অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। আরগন অয়েল নতুন করে উজ্জীবিত গুণের জন্য বিশেষ পরিচিত। এটি ত্বকের কোষকে নতুন করে তৈরী হতে সাহায্য করে এবং ত্বককে মূল্যবান ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ অ্যাসিড জোগায়, এই অ্যাসিডগুলির ময়েশ্চারাইজ করার, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং রিজুভেনেটিং বা পুনরজ্জীবিত করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অপরদিকে মধুরও এই একই বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এটি খুব ভালভাবে ত্বককে পুনরীজ্জিবীত করতে পারে এবং ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমায়। অন্যদিকে ল্যাভেন্ডার অয়েলে ভিটামিন সি রয়েছে, আগের অর্গানিক অ্যাসিডগুলি, খনিজ লবণ ও ট্যানিনও রয়েছে। এ থেকে ত্বক মেরামতের কাজ হতে পারে এবং এগুলি অনেকরকম ত্বকের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তেলগুলি ভালোভাবে মিশে যাওয়ার জন্য লাগাবার আগে আপনি মিশ্রণকে একটু গরম করে নিতে পারেন। মনে রাখবেন ভ্রু-র দাগে কিন্তু ঠান্ডা মিশ্রণ লাগাতে হবে। প্রতিদিন লাগান এবং বেশ কয়েক সপ্তাহ পর দেখুন আপনার ভ্রু-র দাগে নজর অনেক কম পড়ছে।
আইব্রো ট্রান্সপ্লান্ট
ব্রো ট্র্যান্সপ্লান্ট হচ্ছে একধরনের প্রসাধনী প্রক্রিয়া যেখানে চুলের গ্রাফট আপনার ভ্রু-র এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হবে। যারা দাগ ঢেকে ফেলার জন্য অনেক কিছু পদ্ধতির শরণাপন্ন হয়েছেন কিন্তু সফল হননি, তাদের জন্য এর পরামর্শ দেওয়া হয়। যাদের বিশেষ কিছু রোগ, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির জন্য চুল পাকাপাকিভাবে পড়ে গেছে তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য একে উদ্ধারের উপায় বলে মনে করা হয়। স্বাভাবিক সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী ভ্রু পেতে আইব্রো ট্র্যান্সপ্লান্ট দারুন উপায় তবে এটি খরচসাপেক্ষ। এই প্রক্রিয়ায় আপনি আপনার ভ্রুর শেপ, সুগঠন এবং ঘনত্ব বেছে নিতে পারেন। আইব্রো ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়া ম্যানুয়ালি করা হয় আর যে পদ্ধতিতে করা হয় তা হল এফইউই। ডাক্তার রিসিপিয়েন্ট এলাকা থেকে চুলের ফলিকল সংগ্রহ করেন, (সাধারণত কান বা ঘাড়ের এলাকা, পুরুষদের ক্ষেত্রে এগুলি চিবুক থেকেও নেওয়া যেতে পারে)। এর পর সেগুলিকে ভ্রু-র ফাঁকা জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। ফলিকলগুলি সঠিক কোণে রোপণ করা হয় যাতে তারা ভ্রু-র চুলের বৃদ্ধির স্বাভাবিক দিক অনুসারে বেড়ে উঠতে পারে।
মাইক্রোব্লেডিং বনাম আইব্রো স্কার বা দাগ
মাইক্রোব্লেডিং ভ্রুয়ের ছোটোখাটো দাগ ঢেকে দিতে পারে কিনা তা নিয়ে অনেকেই বোধহয় ভাবছেন।
অবশ্যই তা পারে। যদিও দাগযুক্ত টিস্যুতে রঙ্গক বা পিগমেন্ট জমা করা আরও কঠিন, তবে টিস্যুর বিভিন্ন গঠনের কারণে, এর ফলাফল খুব ভাল হতে পারে। কখনো কখনো দাগের ওপর একটি বাড়তি প্রক্রিয়া করা হয় যাতে এর ফল বেশি মাত্রায় স্থায়ী হতে পারে এবং আরো বেশি গোছানো হতে পারে।
ব্রো হেনা বনাম আইব্রো স্কার
ভ্রু হেনা সবসময়ই সবচেয়ে কার্যকর এবং জনপ্রিয় চিকিৎসাগুলির মধ্যে একটি ধরা হয়। এতে ভ্রু এবং ত্বকে রঙ যোগ হয়, তাই এটি ছোট এবং অগভীর দাগগুলিকে ঢেকে দেওয়ার জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। পাউডার হেনা হচ্ছে ন্যাচারাল উদ্ভিজ পণ্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হেনা দিয়ে ত্বক ও চুল ডাই করা হয়। এটি চমৎকার প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ এবং এর ফর্মুলায় খনিজ ও ভিটামিনের কারণে চুলকে কন্ডিশনার করার সময় ভ্রু রঙে দারুণ প্রভাব ফেলে। আপনি মাইক্রোব্লেডিংয়ের বিকল্প হিসাবে সফলভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এর প্রভাবটি ত্বকে প্রায় ১৪ দিন এবং ভ্রু-তে প্রায় ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।